South Bengal

সুন্দরবন

জল-জঙ্গল-খাঁড়ি আর বন্যপ্রাণের মহাকাব্য শুনতে হলে আসতে হবে সুন্দরবনে।

পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপে পা না রাখলে বোঝাই যাবে না, প্রকৃতি কি দুরন্ত বিস্ময় লুকিয়ে রেখেছে আমাদের জন্য। শুধুমাত্র রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্যই নয়, সুন্দরবন তার বিশালত্ব, বন্যপ্রাণের বৈচিত্র, স্থানীয় মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি— সব মিলিয়ে অনন্য। বাদাবন, নদী আর খাঁড়ির এই দেশ না দেখলে প্রকৃতির ভয়াল সুন্দর রূপ অদেখাই থেকে যাবে। সুন্দরী-গরান-গেঁওয়ার জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে সরু খাঁড়ির উপর নৌকা যখন এগোতে থাকবে, অপার বিস্ময় গ্রাস করবে ভ্রমণার্থীদের। শুনতে পাবেন প্রাণ হাতে করে জঙ্গলে মধু সংগ্রহ বা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। বাঘ দেখার চেয়ে তা কোনও অংশে কম আকর্ষণীয় নয়।

Nadia

নদিয়া জেলার বৈচিত্র অঢেল। এখানে এলে ইতিহাসের পুরনো অধ্যায়কে যেমন খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জায়গাও অনেক। ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছে পলাশি, চিরকালীন নবদ্বীপ ও ঐতিহ্যবাহী মায়াপুর। নবদ্বীপের অলিগলিতে যেন থমকে রয়েছে সময়। ইতিহাস থমকে আছে বল্লাল ঢিপিতেও। আছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি। জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে যান বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য। যান একান্ত নিভৃতে ঝোর নদীর কিনারে লুকিয়ে থাকা আসাননগরে। এ ছাড়াও রয়েছে বিশ্বখ্যাত শান্তিপুরের তাঁত। নদিয়ার কথা বললেই ভেসে ওঠে একের পর এক বরেণ্য ব্যক্তিত্বের নাম। চৈতন্য মহাপ্রভু, কৃত্তিবাস ওঝা, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রামতনু লাহিড়ী, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরাম প্রমুখ। পর্যটন মানচিত্রে উজ্জ্বল স্থান অধিকার করে রয়েছে নদিয়া।

পুরুলিয়া বলতেই এককথায় কত কি চোখের সামনে ভেসে ওঠে! রা‌ঢ় বাংলার মুখ যেন পুরুলিয়া। একেবারে বুনো সৌন্দর্য তাকে ঘিরে রেখেছে। পুরুলিয়া বলতেই মনে হয় তার লাল মাটি, তার উঁচু-নিচু ঢেউখেলানো পথ-চিত্র, জঙ্গল, পাহাড়, ছৌ নাচ, আরও কত কি। পুরুলিয়া বলতেই মানুষের মনে প্রথমেই যে নামটি ভেসে ওঠে, সেটি হল অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যা পাহাড় তার সৌন্দর্যে অনন্য। বসন্তে, পলাশের সময়ে পুরুলিয়ায় যাননি, বঙ্গদেশে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম। শুধু তো বাংলাই নয়, পলাশের টানে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণার্থীরা এখানে আসেন। যে কোনও ঋতুতেই পুরুলিয়ায় পৌঁছন না কেন, সে আপনাকে তার ঋতুবৈচিত্রে আপন করে নেবে। পুরুলিয়ার নানা প্রান্ত তার স্বকীয়তায় উজ্জ্বল ও সদা সজীব।

Purulia

Shantiniketan

ঋতুভেদে যেন বদলে যেতে থাকে এই বাড়ির রং। শান্তিনিকেতনের এই বাড়ির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে যে নামটি, সেই নামটি বিরাজমান বাঙালির ঘরে ঘরে! এই বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রবাদপ্রতিম রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।

কণিকার বাবা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ষাটের দশকের গোড়ার দিক থেকে এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। তার আগে তাঁরা ছিলেন গুরুপল্লিতে। এই বাড়ির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে কণিকার স্মৃতি...সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের বড় আদরের মোহরের স্মৃতি। কে আসেননি এই বাড়িতে? দেবব্রত বিশ্বাস, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, সুচিত্রা মিত্র থেকে শুরু করে কে নয়!

বাড়িটির মূল কাঠামো ও ডিজাইন অবিকৃত রেখেই সেটিকে পরিণত করা হয়েছে অতিথি নিবাসে। ধরে রাখা হয়েছে সেই ঐতিহ্যকে। তারই কিছু ঝলক আপনারা এখানে দেখতে পাচ্ছেন।

Bankura

বাঁকুড়া বললেই প্রথমে কী মনে পড়ে? সাধারণ ভাবে মনে আসে বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ঘোড়া, ডোকরা ও হস্তশিল্পের কথা। মনে আসে দশাবতার তাসের কথা। মনে পড়ে যায় বিষ্ণুপুরের কথা। বিষ্ণুপুরের কাহিনি অবশ্য বহুশ্রুত। একে একে আসে মুকুটমণিপুর, রানিবাঁধ, ঝিলিমিলি, জয়রামবাটি, শুশুনিয়া বা জয়পুরের জঙ্গলের কথা। জয়পুরের জঙ্গলে হাতিদের উপস্থিতি রয়েছে। আরও একটি স্বল্প পরিচিত জায়গা আছে বাঁকুড়ায়। বরজোড়া। দামোদরের কাছাকাছি জঙ্গল আর গাছগাছালিতে ঘেরা এখানকার এক অতিথি আবাসে দিন কয়েক কাটানোর অভিজ্ঞতা মনোমুগ্ধকর। সন্ধ্যায় দামোদরের তীরে বারাণসীর ধাঁচে আরতি মহার্ঘ ছুটিকে ভিন্ন মাত্রা দেয়। আছে বাঁকুড়া স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে শুশুনিয়ার কাছে ছুটি কাটানোর চমৎকার ডেরা। ঘরের কাছের বাঁকুড়াকে নতুন করে আবিষ্কার করার মজাই আলাদা!